Monday, July 16, 2012

শুকতারা মোহমুগ্ধতার গল্প

শাহীন আহমেদ
এখন বর্ষাকাল। আকাশের কান্নারা দলবেঁধে প্রতিদিন নামছে মাটির বুকে। বৃষ্টির জলে প্রাণ পেয়েছে প্রকৃতি। সবুজ হয়ে উঠেছে বৃক্ষজগৎ। এমন সময় নাগরিক অনেকের মনে স্বপ্নেরা উঁকি দেয়, আহা যদি সবুজের মাঝে, বৃষ্টির বর্ষিত রাতে, গ্রামের কোনো টিনের ছাদের বাড়িতে রাত কাটাতে পারতাম- স্বপ্নময় রাত। পাঠক, হতাশার কিছু নেই। ব্যবস্থা করে রেখেছে -শুকতারা রিসোর্ট। রিসোর্টের অবস্থান সিলেট শহর থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরে। শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার গেইট থেকে একটু এগিয়ে বামে মোড় নিয়ে মিনিট দুই এগোলেই মিলবে কাংঙ্খিত শুকতারা। শহরের এতো কাছে নিবিড় বনের পাহাড়ী অবস্থান আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর চারদিকের সবুজ গাছপালা আপনাকে ডাকবে- আয় আয়। টিলার খাড়াপথে একটু কষ্ট করে উপরে উঠতে হবে। তবে ভয়ের কিছু নেই। কয়েকদিন বাদেই চালু হবে ট্রেন। উপরে উঠে প্রথমেই চোখে পড়বে তিন তলা বিশিষ্ট একাশিয়া রেস্টুরেন্ট। দ্বিতীয় তলায় খাবারের আয়োজন। পাশে একটা রুমে প্রায় ৪০ জনের মিটিং রুম। তৃতীয় তলায় বসবার, আলাপচারিতার। পাশে একটি রুম জুড়ে পাঠাগার। সিলেটের স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভ্রমণের বই আছে। নিচতলায় গায়ে হলুদ, কর্পোরেট মিটিং বা যেকোনো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যাবে। প্রতিটি তলায় আছে নান্দনিকতা ও পর্যাপ্ত আলো - বাতাসের ব্যবস্থা। আছে ব্যালকনি। মুক্ত হওয়া গ্রহণের উত্তম আয়োজন। আসুন এবার একটু উপরে উঠি। একাশিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে হবে উজান পথে। পূবের রাস্তা ধরে। ওখানেই আপনার বিশ্রাম নিবাস। থাকবার রুম। উপরে উঠেই চোখে পড়বে খোলা মঞ্চের মতো জায়গা। বনাক কোর্ট। এইবার আপনি দিশেহারা হবেন অপার মুগ্ধতায়। যে দিকেই তাকাবেন সবুজের হাতছানি। দূরে সুরমা নদী। তার পর সারিবাঁধা আকাশ ছোঁয়া পাহাড়। মেঘালয় রেইঞ্জ। এখানে শরতে আকাশ রূপ খোলে নিজ আনন্দে। সে এক মাতাল করা দৃশ্য। আসুন রুমে ঢুকি। রুমে ঢুকেই দেখা মিলবে অন্যরকম মুগ্ধতার। রুমের সবকিছুতেই আছে শিল্পের ছোঁয়া। বেতের তৈরি চেয়ার, টেবিল, খাট, মোড়া। খোলামেলা রুম। খোলা বারান্দা। চাইলে রুমে বসেই দেখতে পারেন পাহাড় আর সবুজের মিতালি। বারান্দার উপরে টিনের চাল। বৃষ্টি মুখর রাতে প্রিয়জন সঙ্গী করে আপনার অবস্থান হবে স্মৃতিময়। রুমের ছাদে বসে ও উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতি সুধারূপ। রিসোর্টের নান্দনিক কিছু শিল্পকর্মের কাজ করেছেন নন্দিত ভাষ্কর অলক রায়। আছে ইয়াং স্টারের কিছু পেইন্টিং আর আলোকচিত্র। রিসোর্টে অবস্থানকালীন রাতে থাকবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাউল সঙ্গীত। মণিপুরী নৃত্য। খাবারের পাতে থাকবে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার। বেড়ানোর জন্যেও খুব দূরে যেতে হবে না। পাশেই খাদিম, বরজান চা বাগান, শাহ বদর মোকাম, খাদিম জাতীয় উদ্যান, টিলাগড়ে রিজার্ভ ফরেস্ট, শাহ পরাণ, শাহজালাল (রহ.) এর মাজার। সোয়াম্প ফরেস্ট। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, জৈন্তা রাজবাড়ি, সারি নদী, লালাখাল। একটু দূরে মাধবকু- জলপ্রপাত, টাঙ্গুয়া হাওর, হাকালুকি হাওর, লাউয়াছড়া ফরেস্ট আরো কতো কি। সিলেটের দেখবার আছে অনেক কিছু। আপনি চাইলে উত্তম গাইড দিয়ে দেখাবার  ব্যবস্থাও রেখেছে শুকতারা। শুকতারা এই নান্দনিক আয়োজনের কারিগর জেরিনা হোসেন। নিজেই আর্কিটেক্ট। স্বামী মোহাম্মদ হোসেন মুরাদ বিশ্ব ট্রাভেলার। দু’জনে স্বপ্ন দিয়ে বুনেছেন এই নকশিকাঁথা-শুকতারা। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু। আসছে রোজার শেষেই আনুষ্ঠানিক ওপেন হবে এর ফটক। তবে আপনি চাইলে এখনই থাকতে পারেন। মুরাদ-জেরিনার রিসোর্ট নিয়ে আছে আরো অনেক চমক। প্রজেক্টটি সম্পূর্ণ হলে দেশবাসী পাবে চমৎকার একটি রিসোর্ট। যোগাযোগ- ০৮২১-২৮৭০৯৯৪-৫,০১৭৬৪-৫৪৩৫৩৫। www.shuktararesort.com
photo.mustafiz mamun
 

No comments:

Post a Comment