Monday, July 16, 2012

বঙ্গোপসাগরে তিমি দেখার গল্প


শাহীন আহমেদ
TIMI;photo.M.R nomani
DOLPHIN:photo.M.R nomani
তারা আমাদের কোনো নিমন্ত্রণ জানায়নি। তবু আমরা এসেছি একবুক আশা নিয়ে। জীবন বাজী রেখে গভীর সমুদ্রে যদি দেখা পাই। ঘুরছি তো ঘুরছি। অগুনতি ডলফিনের তিড়িং বিড়িং নাচা-নাচি দেখতে দেখতে এক সময় বিরক্তি দেখা দেয় মনে- শরীরে। দুপুরের খাবার গ্রহণের পর সবাই বিরসবদনে, বেদনাবিধুর হয়ে, মলিন চেহারা নিয়ে বসে থাকি। অপেক্ষা বড় যন্ত্রণাদায়ক। মৃত্যুর চেয়ে কঠিন। অনেকের চোখে নামে রাজ্যির ঘুম। কারো চোখে তন্দ্রা, কারো ঝিমুনি আসে। হঠাৎ একসময় গাইড খোকন ভাই হাক দিয়ে বললেনÑ সবাই দেখুন। আমরা দেখলাম নীল জলরাশির মধ্যে কালোপাহাড়ের মতো ভোশ্শ করে কি যেনো একটা উঠলো, আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখি জলজ্যান্ত তিমি। টেলিভিশনের স্ক্রিনে নয়। একেবারে চোখের সামনে। নিজের দেশে। বঙ্গোপসাগরে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে। সবাই আকাশ পাতাল চিৎকার করে উঠে। কেউবা নাচতে শুরু করে। ক্যামেরার ক্লিক পড়তে থাকে অহর্ণিশ। অনাকাক্সিক্ষত অতিথি দেখে তিমি ডুব মারে। ফের ওঠে প্রায় সাত মিনিট পর। একেবারে চোখের সামনে। আমরা আবার চিৎকার করে উঠি। এখানে দেখি প্রায় চারটি তিমি। যেনো একটি পরিবার। বিটিইএফ পরিবারের সঙ্গে তিমি দলের আন্তরিক মোলাকাতের পর দলনেতা আশরাফুল গনির চেহারায় ফুটে আলোর রুশনাই। ড. মনিরুল খান বললেন, যাক বাঁচলাম। এই বাঁচা মানে লজ্জার হাত থেকে বাঁচা। কারণ আমরা সবাই প্রিয়জনকে বলে এসেছি তিমি দেখতে যাচ্ছি। নিজেদের জলসীমায় তিমি দেখার গল্প নিয়ে এ বই। এবার খোলাসা করে বলি।বঙ্গোপসাগরের ভেতর একটি জায়গা রয়েছে গভীর খাদের মতো। বৃটিশ আমলে গবেষকরা এর কোনো কুল-কিনারা না পেয়ে নাম রেখে দেন সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড; বাংলায় অতল স্পর্শ। পাহাড়ে যেমন গিরিখাদ থাকে, এটিও ঠিক তেমনি। সাদা চোখে এই গভীর খাদ দেখা যায় না। তবে এখানে পৌঁছার একটু আগেই দেখা যায় নীল জলরাশি। দেখা যায় তিমি, কয়েক প্রজাতির ডলফিন, হাঙ্গরসহ বিচিত্র জাতের বড় বড় মাছ। আর জেলেরা তাদের বাশের হিসেবে ‘বাম’ অনুযায়ী কোনো হিসাব না পেয়ে নাম রাখেন ‘নাই বাম’। একবাম প্রায় পাঁচ ফুটের মতো। উল্লেখ্য, এটি বিশ্বের বড় ১১টি ক্যানিয়নের একটি। এর গভীরতা কোথাও কোথাও প্রায় ৯শ’ মিটার।


সাম্পানওয়ালা, ট্রলার ছাড়ো, পাল তোলো
দুই ফেব্র“য়ারি রাতের খাবারের পর দলনেতার ঘোষণাÑ বন্ধুরা আমাদের এক্সপেডিশন স্টার্ট। প্লিজ বি রেডি। লেটস গো। আমরা জিনিসপত্তর নিয়ে ট্রলারে চেপে বসি। সব ঠিকঠাক করে রাখা হয়। তেরপাল টাঙ্গানো হয়। ড্রামে পানি ভর্তি করা হয়। আমরা প্রস্তুত। কিন্তু ট্রলার চলবে না। কারণ খালে পানি কম। কাজেই অপেক্ষা করতে হবে জোয়ারের। জলাপেক্ষায় রাত বেড়ে ভোর হয় এখানে। এখানে এখন অনেক পানি। ছোট্ট এ খালে এতো পানি এলো কোথা থেকে। ভাবতেই অবাক লাগে। ট্রলার ভটভট শব্দ করে রওয়ানা দিয়েছে অজানার উদ্দেশ্যে। সকালের মিষ্টি বাতাস স্পর্শ করে আমরা চলছি। এরপর ট্রলার নামলো আন্ধারমানিক নদীতে। বিশাল এক নদী। নদীতে কিছুক্ষণ চলার পরই ট্রলার নামে সমুদ্রে।

ও সমুদ্র কাছে আসো, ভালোবাস
এখন আমরা সমুদ্রে, বঙ্গোপসাগরে। শীতের সকালের নরম রোদ, মিষ্টি বাতাস, সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ বেশ লাগছিলো। চলতে চলতে ডানে দেখতে পাই ফাতরার বন। তারপর অনেক দূরে দেখা যাচ্ছিলো সুন্দরবনের দুবলার চর। আমরা থেমে নেই। নোঙর নেই। ট্রলারের বিরতি নেই কোনো। চলছি তো চলছি। উপরে গনি ভাই, রবিন ভাই, জিলানি ভাই, ওয়াকিল ভাই, ফায়হাম, মনোয়ার, ট্রলারের সুকানি ও গাইডকে নিয়ে বসিয়েছেন আসর। সামনের খোলা পাটাতনে সামির ভাই, শাহরিয়ার ও শুক্কুর ভাইকে নিয়ে বসিয়েছে গানের আসর। সামির ভাই চমৎকারভাবে ঢোল, শাহরিয়ার করতাল বাজাচ্ছিলেন। কিছুটা দূর থেকে তন্ময় হয়ে তাদের গান শুনছেন রিফাত ভাই। শুক্কুর ভাই আজন্ম গায়ক। অনর্গল গান গেয়ে চলেছেন। তার আধ্যাত্মিক গানগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায় অনেকের। অবাক মুগ্ধ হয়ে শুনি শুক্কুর ভাইয়ের গান একটার পর একটা। ট্রলারের একেবারে সামনে গলুইধরে মশিউর ভাই, ফেরদৌস, আরিফ ভাই, মাহি, মনির ও রীপন মিলে চলছে নানান গল্প। ড. মৃদুল ও মেহেদি রাজীব আলাপে মগ্ন। কারণ তারা দু’জনেই শিক্ষক। শুধু ফটোগ্রাফার ইন্দ্রনীল কিশোর একা। বিশাল বস্তা খুলে ক্যামেরার ল্যান্স চেকে ব্যস্ত তিনি। রাজু আর নূরুল ভাই রান্নার আয়োজনে। আমাদের আনন্দযজ্ঞ চলছে। চলছে নানান বিষয়ে তর্কের তুফান। এভাবে চলতে চলতে এক সময় কাছে পিঠে আর কোনো ফিশিং ট্রলার নজরে আসে না। উপরে খোলা আকাশ, নিচে সমুদ্রের অথৈ জলরাশি। সমুদ্রের পানি বেশ স্বচ্ছ দেখাচ্ছে। ঢেউগুলোও অনেক বড়। ট্রলারে রোলিং হচ্ছে খুব। মনে হচ্ছে আমরা গভীর সাগরে আছি।

ম্যাপ, জিপিএস, ল্যাপটপ
এ কূল-কিনারাহীন সমুদ্রে আমরা আর কতো ভাসবো। আমাদের বুঝি কোনো মঞ্জিল নেই। টার্গেট নেই। না বন্ধু আছে। ঐ যে আগেই বলেছি- সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। রবিন ভাই’র সূত্রে পাওয়া যায় বিশেষ- বিশাল এক ম্যাপ। ড. মৃদুল, মশিউর ভাই ও রীপন গোল হয়ে বসেন। উপর থেকে আলোচনায় যুক্ত আছেন গণি ভাই। সঙ্গে গাইড খোকন ভাই ও মাঝি নুরু ভাই। তাদের আলাপের পর আমরা বুঝতে পারি নৌকা ঠিকই চলছে নির্দিষ্ট পথে। মশিউর ভাইর হাতে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) দেখে মাঝি নুরু ভাই বললেনÑ এয়া কি, কম্বিডার? এতো ছোডো কা? যখন তাকে বুঝানো হলো এই যন্ত্র দেখে আমরা ‘নাইবাম’ যাবো। পৃথিবীর সব বিস্ময়ে তিনি অজানা-অচেনা যন্ত্রটি ফের দেখেন। তার পয়ত্রিশ বছর নৌকাজীবনে তিনি এমন কথা কখনো শুনেননি এবং যন্ত্রটি এই প্রথম দেখলেন। তবে তার খোলা প্রশ্ন এত বড় দরিয়া আমরা ‘ছোডো’ এ ‘কম্বিডারে’ কীভাবে ঢুকালাম।

চুপ চুপ, ডলফিন
গাইড খোকন ভাইর চোখ সী-গাল পাখির মতো। কিন্তু আমরা সে চোখের ক্যারিশমা এখনো দেখতে পাইনি। তাকে বারবার প্রশ্নবানে বিরক্ত করছি। কই বস আপনার ডলফিন? কিছুইতো দেখছি না। সমুদ্রের অথৈ পাথারে শুধু পানি আর কতো দেখবো। কতো গল্প করবো, গাইবো গান? বিরক্তি ধরে গেছে। বেশি বিরক্ত সাব্বির ফেরদৌস। সে বরিশালের ছেলে। বললো, বরিশালের নদীতে এতোক্ষণে কয়েক হাজার ইরাবতি ডলফিন দেখা যেতো। সঙ্গী রাসেলও সায় দিলো। কিন্তু গাইড খোকন ভাই নিশ্চুপ। নির্ভেজাল দুশ্চিন্তামুক্ত। কারণ তিনি জানেন ডলফিন দেখা যাবেই। এবং আশ্চর্য দেখা গেলো ডলফিন। কিছুটা দুরে, তারপর আরো কাছে, অত:পর একদম কাছে। ট্রলারের লগেই। সেকি উচ্ছ্বাস, কিযে আনন্দ, কীভাবে যে বুঝাই।

বয়া কতদূর
বয়া হলো গভীর সমুদ্রে ফিশিং ট্রলারদের রাত্রি যাপনের নির্দিষ্ট স্থান। এটি মার্কিং করা আছে। কাজেই ফিশিং ট্রলার সারাদিন মাছ ধরে রাতে এখানে চলে আসে। এবারও মশিউর ভাইয়ের ডাক পড়লো। বয়া কতদূর! তিনি জিপিএস বাম হাতে ধরে, ডান হাত তুলে কোনো শব্দ না করে নির্দেশ দিলেন ডানে। ট্রলার চলতে থাকলো। এক সময় আমরা পৌঁছে গেলাম বয়াতে। দেখলাম অনেক ফিশিং ট্রলার নোঙর করে আছে। আমরাও ট্রলার অ্যাংকর করলাম। প্রায় পঞ্চাশ মিটার পানির ওপর। উল্লেখ্য, বয়া থেকে পশ্চিমে কিছুটা দূরে (ট্রলারে গেলে ঘণ্টা দেড়েকের পথ) পানির নিচে দুটি পাহাড় আছে বলে জানিয়েছেন গাইড খোকন ভাই।

ও গানওয়ালা, আসর বসাও
যেকোনো ট্রিপে ওয়াকিল ভাই মিস করলে গণি ভাই গান গেয়ে সে অপূর্ণতা পূর্ণ করেন। কিন্তু এবার ওয়াকিল ভাই এসেছেন। কাজেই পরিবেশ ভিন্ন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মিস্ত্রি শুক্কুর ভাই ও মাঝির সহযোগী মনিরুল ভাই। কি যে অসাধারণ তাদের গানের গলা। গানের তালে চমৎকার ঢোল বাজাচ্ছিলেন রবিন ভাই। তার এ প্রতিভার খবর বিটিইএফ পরিবারের জানা ছিলো না। তালে তালে করতাল বাজাচ্ছিলো শাহরিয়ার। খঞ্জনি ওয়াকিল ভাইর হাতে। মনিরুল ও শুক্কুর ভাইর গানের জোয়ারে ভাসতে থাকে সবাই। এতো গান এদের স্টকে বলে বুঝানো মুশকিল। চাইলে গান গেয়ে রাতের পর রাত তারা পার করতে পারবেন। লালন, হাছন, রাধারমন, বাউল করিম, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদি, মারফতিসহ কতো গান যে চলছিলো আসরে। এমনকি মিলা ইসলামের ডিসকোবান্দরও বাদ যায়নি। আসরে অনেকে টিনের প্লেট এমনকি গ্লাস দিয়ে টুংটাং শব্দ করে তাদের স্বরব মিউজিক্যাল উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলেন।

এক কাপ চা, একটি মধুর সকাল
আজকের সাগর-সকালে সূর্য উঠেছে আলোঝলমলে। বাতাসটাও মায়ামাখা। চারদিকে শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ। বড় ভালো লাগছে। শুভ সকাল জানিয়ে কাছে এসে বসলেন রাসেল। ট্রলারের গলুইতে বসা আমরা দু’জন। তারপর কিন্তু আর বসবার কোনো জায়গা নেই। ইতোমধ্যে সবাই উঠে পড়েছে। প্রস্তুত ক্যামেরাবাহিনী। আমরা আজই প্রথম সোয়াচে যাবো। এখন শুধুই অপেক্ষা। কবে দেখা মিলবে নীলবসনা সোয়াচের। এমন সময়ে সকালের প্রাক নাস্তার জন্যে বিস্কিট-টোস্ট দেয়া হচ্ছিলো। মনে মনে ভাবছি যদি কেউ এক কাপ চা নিয়ে আসতো। বড় ভাল লাগতো। ভাবতে না ভাবতেই দেখি রাজু মার্মা চা নিয়ে হাজির। কিযে ভালো লেগেছিলো তখন। ধন্যবাদ রাজু।

দেখো সোয়াচ ঐ, স্বপ্নভূমি ঐ
আজকের আবহাওয়া বেশ ভালো। মিষ্টি হাওয়া বইছে। বাতাসের কারণে রোদের তাপ খুব একটা অনুভূত হচ্ছে না। এখানে শুধুই আমরা। একেবারে একলা। এদিকটাতে মাছ ধরার কোনো ট্রলার নেই। হঠাৎ গাইড খোকন ভাই বললেন- দেখেন ঐ যে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। আমরা নড়েচড়ে বসলাম। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে এক জায়গায় সমুদ্র দু’ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে খোলা পানি। অন্যদিকে ডার্ক ব্লু। ঘন নীল। আস্তে আস্তে আমরা একেবারে সোয়াচের কাছে চলে আসি এবং ঢুকে পড়ি সোয়াচে। পানি এতো সুন্দর হয়! আমরা মোহমুগ্ধ হয়ে দেখি। পানি স্পর্শ করি। বড় শান্তি লাগে। মন গেয়ে ওঠে ওরে নীল দরিয়া...। নিজের দেশে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য আছে দেখে অপার আনন্দে উত্তেজিত হতে থাকি। এই আত্মতুষ্টির বর্ণনা দেয়া মুশকিল।

পাখি তোর দেশ কই
এই একলা সমুদ্রে আমাদের সঙ্গী হিসেবে অগুনতি সী-গাল পাখি। ডানা মেলে শূন্যে ওড়াউড়ির দৃশ্য খুব হৃদয়গ্রাহী। মন বলে ওঠে আচ্ছা পাখির মতো যদি এভাবে উড়তে পারতাম। তারপর আবার ভাবছি, পাখিগুলোর বাড়ি কই, দেশ কই! এরা এই সমুদ্রে ঘুমায় কোথায়? কিন্তু দেখলাম পাখিগুলো ওড়াউড়ি ছাড়াও পানিতে নামে হাসের মতো। জলকেলি করে। ডুব মারে। মাছ ধরে। এসব খন্ডদৃশ্য দেখতে বেশ লাগছিলো। এইসব সী-গাল পাখি অনেক প্রজাতির হয়ে থাকে। আমরা চার প্রজাতির সী-গাল দেখেছি।

ঐ ডলফিন যা ভাগ
সোয়াচের ঘন নীল জলরাশিতে ডলফিন প্রথমে একটি, দুটি পরে দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরছে। যেদিকে তাকাচ্ছি এখন শুধুই ডলফিন। যেনো আমরা এসেছি কোনো এক ডলফিন রাজ্যে। কিছু কিছু ডলফিন পানির নিচ থেকে উঠে উঠে লাফ দিচ্ছিলো। এ যেনো তাদের জলনৃত্য। প্রথম প্রথম দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। মজাও পাচ্ছিলাম বেশ। কিন্তু আর কতো দেখবো। কারণ এখনো তিমির দেখা নাই। যার জন্যে এসেছি বিপুল আশা ও উৎসাহ নিয়ে। এ কারণে ডলফিন সাম্রাজ্যে এদের লম্ফ-ঝম্ফ আর ভাল্লাগছিলোনা। তাই কেউ একজন রাগ করে বললেন- যা ভাগ।

...?
কি? কী! জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? তিমি। তিমিরে ভাই। একদম চোখের সামনে। অবিশ্বাস্য। সবার চিৎকার আর আনন্দধ্বনি সে এক উল্লাস নৃত্য। ও গড। ইয়া আল্লাহ! তিমি দেখে ফেলেছি। শুরুতেই লিখেছি, সারাদিন আমরা সোয়াচে মাইলের পর মাইল ঘুরছি। শেষ বিকেল পর্যন্ত খুব হতাশ সবাই। মেহেদি আশাহত হয়ে বলছে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কী বলবো। ড. মৃদুলেরও একই অবস্থা। কারণ, তারা দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমরা সবাই প্রিয়জনকে বলে এসেছি তিমি দেখতে যাচ্ছি। না দেখতে পারলে লজ্জার শেষ থাকবে না। গাইড খোকন ভাইকে অনেকে দু’কথাও শুনিয়ে দিচ্ছিল। শেষ বিকেলে মনোকষ্টে অনেকে তন্দ্রামগ্ন হয়ে পড়ে। আকস্মিক গাইড খোকন ভাইর হাকডাকে জেগে উঠে দেখে মহাবিস্ময়। প্রথমে ভোশ্ করে ওঠে। পরে আবার ওঠে। পরে আবার। একদম চোখের সামনে। ক্যামেরার খটাশ খটাশ শব্দ ও আমাদের গগণবিধারী উল্লাসধ্বনি দেখার মতো দৃশ্য ছিলো। সবার চোখেমুখে প্রশান্তি। উল্লেখ্য আমরা এখানে দেখেছি চারটি তিমি। এরা ব্রডাস (ইৎুফব’ং ডযধষব- ঢ়ৎড়হড়ঁহপবফ “নৎড়ড়ফঁং”) প্রজাতির। জানালেন প্রাণীবিদ ড. মনিরুল খান। এছাড়া এখানে ‘ফিন’ ও ‘সেই’ প্রজাতির তিমি দেখা যায়।

তৃতীয় দিবস, আয় যাইগা
এবারের এক্সপেডিশনের আজ শেষ দিন। সাত-সকালেই আমরা ফের ছুটি সোয়াচের দিকে। যদি আজ অন্য প্রজাতির আরো তিমি দেখতে পাই এমন আশায়। অনেক চক্করের পর অবাক করে দিয়ে একটি তিমি তার উপস্থিতি জানান দেয়। আমরা দীর্ঘক্ষণ তার পেছন ছাড়িনা। এক সময় দলনেতার ঘোষণাÑ ‘বন্ধুরা সময়ের শাসন মানতে হবে। আমরা এখন ফিরে যাবো মাটির টানে, ঢাকায়।’ তবে নিশ্চিত অনেকের মন আসতে চাইছিলো না।

কতদূর তুমি গিয়েছিলে সখা
প্রশ্ন আসতে পারে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড কতদূর? কুয়াকাটা থেকে প্রায় নব্বই কিলোমিটার। সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কি.মি.। কক্সবাজার থেকে দুশো পঞ্চাশ কি.মি.। আমরা মোট তিনশো পঞ্চাশ কি.মি. জলপথ ভ্রমণ করেছি।

একটি টিপস
সোয়াচে যাবার পর যখন দেখবেন সী-গাল পাখি নিচে নির্দিষ্ট জায়গায় বার বার চক্কর দিচ্ছে, তখন ধরে নিতে হবে এখানে ডলফিন আছে। যখন উঁচুতে সী-গাল উড়বে তখন ধরে নিন তিমি এখানে আছেই। অভিজ্ঞতা থেকে বলা। সম্ভাবনার কথা লিখছি।
 

No comments:

Post a Comment